চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা বদ্ধভুমি

 

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা বদ্ধভুমি

আমরা আজ স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আমরা যত সহজে স্বাধীন কথাটা বলতে পারি তত সহজে কিন্তু আমাদের এই স্বাধীনতাটা অর্জন হয়নি। আমাদের আজকের এই স্বাধীনতা অর্জন করতে অনেক ভাইয়ের রক্ত ঝড়েছে অনেক মা-বোনকে দিতে হয়েছে তাদের ইজ্জত। পাক সেনারা আমাদের দেশের মানুষদের উপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। আমাদের দেশের নিরীহ মানুষদেরকে ধরে নিয়ে যেয়ে গণহত্যা করেছে।

যার সাক্ষী হিসাবে বাংলাদেশে অসংখ্য গণ কবর আজও তাদের সৃতি বহন করে চলেছে। এমনই একটা গণকবর আছে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার লাল ব্রীজ নামক স্থানের একটু পাশে। এখানে ছিল পাক সেনাদের মিলিটারি ক্যাম্প। মুক্তিযুদ্ধের সময় আলমডাঙ্গার রেল ব্রীজের পাশে ট্রেন আপ, ডাউন এর সময় ট্রেন থেকে নিরিহ মানুষদের কে ধরে পাক সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যেয়ে অমানবিক নির্যাতন করতো পাক সেনারা।

আবার মুক্তিকামি অনেক মানুষকে পাক সেনারা লাল ব্রীজের পাশে নিয়ে যেয়ে কাউকে গুলি করে, কারও কারও আবার হাত-পা বেঁধে রৌদ্রের মধ্যে মাটির নিচে গলা পর্যন্ত পুঁতে রেখে দিত। আবার কখনো কখনো দেওয়ালের সাথে পা উপরের দিকে দিয়ে মাথা নিচের দিকে দিয়ে অমানবিক ভাবে নিরীহ বাঙ্গালীদের কে হত্যা করতো পাক সেনারা।

এবং যাদের হত্যা করতো তাদেরকে ওখানে গণকবর দিতো। প্রত্যেকটা গণকবরই মুক্তিযুদ্ধের করুণ সৃতি বহন করে। আর তাই মুক্তিযুদ্ধের এতবছর পরেও আজও পাক বাহিনীর সেই নির্মম, নিষ্ঠুর, পাশবিক অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে অত্যাচারের স্বীকার মুক্তিকামি নিরিহ মানুষদের সৃতি ধরে রেখেছে আলমডাঙ্গার এই বধ্যভূমিটি।

ভবিৎসত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানানোর উদ্দেশ্যে এখানে সেই পাশবিক নির্যাতনের চিত্রগুলো তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন ছবি ও মানুষের মূর্তি দিয়ে। পাক বাহিনী যেই ভাবে মানুষ হত্যা করেছিলো সেই রকম অনেক গুলো মূর্তি রাখা হয়েছে এখানে। রাখা আছে কিছু মাথার খুলির মূর্তি। বধ্যভূমির চারপাশ দিয়ে করা হয়েছে অনেক রকম ফুলের বাগান।

মুক্তিযুদ্ধের এই করুন চিত্র দেখতে প্রতিদিনই কিছু না কিছু মানুষ ভিড় করে এই বধ্যভূমিতে। বলতে গেলে সারাদিনই ওখানে অনেক মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। তবে সব চেয়ে বেশী ভিড় হয় ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে।

ঈদ ও পহেলা বৈশাখে বধ্যভূমিতে প্রচুর ভিড় হয়। কেউ যাই প্রিয় মানুষদের নিয়ে ঘুরতে, কেউ যাই ছবি তুলতে, আবার কেউ কেউ যাই মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সেই করুণ পাশবিক নির্যাতনের চিত্র দেখতে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে বধ্যভূমি। কিন্তু এখনকার চিত্র অন্যরকম। করোনাভাইরাস এর কারণে অনেক দিন বধ্যভূমিতে কোন মানুষের আনাগোনা ছিলোনা।

তবে আবারও বধ্যভূমিতে সেই আগের ন্যায় মানুষের আনাগোনার দেখা মিলেছে মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশে সবাই অনেক আনন্দের সাথে সময় কাটায়।

Post a Comment

0 Comments