মুক্তিযুদ্ধে খ্রীষ্টিয় সমাজের ভূমিকা

    

 মুক্তিযুদ্ধে খ্রীষ্টিয় সমাজের ভূমিকা


বঙ্গবন্ধুর  জনকেন্দ্রিক এবং গণতান্ত্রিক  রাষ্ট্র গঠন সম্পর্কিত আদর্শ অন্তরে লালিত করে  

 1971 সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় খ্রীষ্টিয়ান মিশনারীগণ মানুষের দুর্যোগে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিলেন।


 আর্চবিশপ অমর গাঙ্গুলী সিএসসি মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মহিমান্বিত করে মুক্তিযুদ্ধের সময়  খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠান গুলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান নিয়েছিলেন।  আর টি এ গাঙ্গুলী  গণহত্যা ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিবৃতি দেয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে  পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কর্নেলিয়াস এর দেখা করেন।


 প্রধান বিচারপতি কর্নেলিয়াস  ছিলেন একজন ক্যাথলিক  খ্রীষ্টিয়ান । কিন্তু তাকে হতাশা নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল। খ্রীষ্টিয়ান মিশনারীগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুস্থ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা ও সান্তনা দিতে কর্মরত ছিলেন। যেখানে সর্বত্রই ছিল মৃত্যুর বিভীষিকা সেখানে স্বাধীনতা আন্দোলনে সহায়তা করার জন্য সাহসী এবং বিচক্ষণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ।


 আর্চবিশপ অমর গাঙ্গুলী সিএসসি,  খ্রিস্টান হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোর  মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন ও সঠিক চিকিৎসা প্রধানের নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে খ্রিস্টান ফাদারগণ  হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টের বোঝা নিজের কাঁধে নিয়ে দিনের পর দিন খ্রিস্টান মিশনারীরা কাজ করেছেন।অমর গাঙ্গুলীর নির্দেশে মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন খ্রিস্টান মিশনারি গণ ।


 মিশনারিদের পদক্ষেপ ছিল সময়োপযোগী মানুষের কল্যাণ সাধন করা ও মাতৃভূমিকে রক্ষা জন্য সাহসী ভূমিকা রাখা।  পশ্চিম পাকিস্তানী সেনারা বেশকিছু ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের হত্যা করেছিল ফাদার রেন্ডি থেকে শুরু করে অসংখ্য ফাদার উল্লেখযোগ্য। যশোরের দরিদ্র মানুষের  বন্ধু ফাদার মারিও ভেরেনসি। যিনি সেনাদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য দুহাত বাড়িয়ে প্রতিরোধ করতে গিয়ে সরাসরি বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি জনগণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।খ্রীষ্টিয়ান মিশনারীগণ স্বাধীনতার পর পুনর্বাসন এবং আর্থিক উন্নয়নের জন্য  সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।


 আর্চবিশপ স্বাধীনতার মূল বিষয় বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ নামক নতুন স্বীকৃতি আদায়ের জন্য  কাজ করেন। আর্চবিশপ গাঙ্গুলী বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জন করার জন্য ভ্যাটিকানে গমন করেন এবং নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারকে ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রচেষ্টায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে 1972 খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে সাক্ষাৎ করেন।


মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষকে বাঁচাতে, মানুষকে রক্ষার জন্য বিদেশি ডাক্তার ও নার্সদের মুক্তিযুদ্ধকালীন সংকট মোকাবেলায়কাজ করেন। পাকিস্তানীদের  কাছ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য যে  দৃষ্টান্ত দেখানো হয়ে ছিল, তা লিপিবদ্ধ করা হয় দুটি গ্রন্থে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীতজ্ঞ সমর দাস এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রণব দাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দেশের জন্য কাজ করেন । তারা মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে পবিত্র বাইবেলের ব্যাখ্যা করেন এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।ডেভিড প্রণব দাস খ্রিস্টানদের মুক্তিযুদ্ধকালীন অবদান তুলে ধরার জন্য পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র একাত্তরের যীশু নির্মাণ করেন ।


Post a Comment

0 Comments